১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের একটি ফ্ল্যাট থেকে খুলনা/ঢালিউড অভিনেতা সালমান শাহের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনাটি তখন থেকেই প্রশ্ন ও বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। সরকারি তদন্ত প্রকল্পিতভাবে অপমৃত্যু (আত্মহত্যা) বলে ঘোষণা করলেও নায়কটির পরিবার, সহশিল্পী ও ভক্তরা দীর্ঘদিন ধরে তার মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘সুস্পষ্ট সন্দেহজনক’ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। ২৯ বছর পর সেই অপমৃত্যু মামলাটি আদালতের আদেশে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হওয়ায় আবারও বিষয়টি দেশের বিনোদন ও বিচারবিষয়ক আলোচনায় উঠে এসেছে।
গত সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার এক দায়রা জজ আদালত অপমৃত্যু মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়ে হত্যা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন। ওই আদালতের নির্দেশপত্রের পরই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে—এবং রমনা থানা ইতোমধ্যেই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে যেন সংশ্লিষ্টরা দেশ ছাড়তে না পারেন।
এই নতুন দফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপডেট হল—সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর দাবি ও বক্তব্যগুলো আবার সুবিধাজনকভাবে নজরে এসেছে। লন্ডন থেকে সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু প্রকাশ্য মন্তব্য করেছেন; সেখানে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিশ্বাস করে গেছেন—তার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তিনি মনে করেন, ঝুলন্ত অবস্থার দাগ-ছাপ ও শারীরিক আলামত দেখা গেলেই বোঝা যেত—এটি পরিকল্পিত হত্যা। নীলা চৌধুরী চিকিৎসা ও আইনি পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া কিছু দৃষ্টান্ত তিনি মিডিয়ার কাছে ব্যক্ত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, ‘কিছু লোক পরে স্বীকারও করেছে কীভাবে খুন করা হয়েছে।’
নীলা চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবছরই বহু কটুখানি ও কটু কথা তাকে শুনতে হয়েছে; কেউ কেউ তাকে সন্দেহের চোখে দেখিয়েছেন—এ সব কষ্ট তিনি এখনও ভুলতে পারেননি। তবে এখন আদালতের নির্দেশ ও মামলার পুনরুদ্ধারে তিনি কিছুটা ‘আস্থাবান’ বোধ করছেন। তার কথায়, “এখন মনে হচ্ছে—ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে আমরা এগিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, প্রমাণে ন্যায়বিচার হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের প্রাথমিক তদন্তে পিবিআই’র রিপোর্টে ইমপ্রেশন ছিল—আত্মহত্যার সম্ভাব্যতা। এরপর নানা সময়ে বিভিন্ন অঙ্গীভূত ও ব্যক্তিগত দাবীর ভিত্তিতে মামলার পরিস্থিতি পাল্টেছে; ২০২১ সালে নীলা চৌধুরী পিবিআইয়ের তদন্তকে ভিত্তিহীন বলে নারাজি জানিয়েছিলেন। এবার আদালত মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে পুনরায় খোলার নির্দেশ দিয়েছেন—এটিই ঘটনা শিরোনামে ফেরার মূল কারণ।
আইনী পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য হচ্ছে—নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের হলে তদন্তকারী সংস্থাকে উদ্ধারযোগ্য সকল আলামত পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে; সিআইডি, ফরেনসিক ল্যাব ও সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে হবে। রমনা থানা চাইলে বিদেশি সাহায্য বা বিশেষজ্ঞদের সহায়তাও নিতে পারে—যা ইতোমধ্যেই হচ্ছে কি না, তা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বলাই প্রয়োজন—নিয়ম অনুযায়ী, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রমাণ সংগ্রহ করে চার্জশিট প্রস্তুত করবেন; তারপর আদালতে দাখিল করলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মামলায় নাম থাকা কয়েকজন ব্যক্তির বর্তমানে কোথায়—এধর্মে সমসাময়িক অনুসন্ধান চলছে এবং ইতোমধ্যেই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় তাদের অবস্থান নির্ধারণে ইমিগ্রেশনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিনোদন অঙ্গনের নানা কণ্ঠকার—সহ-শিল্পীরাও এটা বিচারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ এই মামলার দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছেন যাতে ‘অবশ্যপ্রমাণ’ সামনে আসে। অপরদিকে বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদরা বলছেন—প্রসঙ্গটি কেবল একটা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নয়, বরং চলচ্চিত্র ইতিহাস ও সামাজিক ন্যারেটিভেরও একটি অংশ; তাই তদন্ত স্বচ্ছ থাকলে জনগণও শান্তি পাবে।
শেষে, নীলা চৌধুরীর কথাই সারমর্ম জানা প্রয়োজন—তিনি বারবার বলেছেন, তিনি চান সত্য বেরিয়ে আসুক এবং যারা দায়ী তারা আইনের আওতায় এলে তিনি মানসিক শান্তি পাবেন। এই মামলার পরবর্তী পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট, ফরেনসিক ফলাফল ও আদালতের কার্যক্রম সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করা হবে। আমরা এই স্থানে যথাক্রমে নতুন আপডেট পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জানিয়ে দেবো।
Leave a Reply