রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থা ও নাজুক পরিবেশ। চিকিৎসার আশায় প্রতিদিন হাজারো রোগী এখানে আসলেও তাদের অধিকাংশকেই নানা হয়রানি, দুর্নীতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে জরাজীর্ণ বেড, ভাঙা দরজা-জানালা, স্যাঁতসেঁতে ফ্লোর, চারদিকে ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধে পরিবেশ হয়ে উঠেছে অসহনীয়। হাসপাতালের মূল গেইটে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাহারি দোকান ও হকারের ভিড়। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের ম্যানেজ করেই চলছে এসব ব্যবসা। বাউন্ডারির ভেতরেই চলছে প্রকাশ্যে ধূমপান।
ইমার্জেন্সি গেইট দিয়ে প্রবেশের সময় তীব্র দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। দেখা যায়, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু কর্মী হুইলচেয়ার ও ট্রলির উপর বসে আছে। রোগীর প্রয়োজনে হুইলচেয়ার বা ট্রলি নিতে হলে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
গতকাল এক রোগীকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বজনদের জানান, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কোনো বেড খালি নেই, তাই ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু পরে ওয়ার্ড বয়ের সহায়তায় এক হাজার টাকার বিনিময়ে বেড পাওয়া যায়। হাসপাতালের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এখানে সব সেবাই টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায়। টাকা দিলে সব ম্যানেজ হয়।”
হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের ভেতর ছোট ছোট তেলাপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইসাথে মানুষ, কুকুর ও বেড়ালের সহাবস্থানও চোখে পড়েছে। পাঁচতলার এক ওয়ার্ডে দেখা গেছে, এক রোগীর পাশে শুয়ে আছে বেওয়ারিশ কুকুর, অন্যদিকে একটি কুকুর খাবারের সন্ধানে ঘুরছে বেডের চারপাশে।
ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোতে ময়লা উপচে পড়ছে। দুর্গন্ধে রোগী ও স্বজনদের অবস্থা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ পাশের অন্ধকার সিঁড়িতে ভবঘুরে পথশিশুরা রাত কাটাচ্ছে।
রোগীর স্বজনরা জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার আশায় তারা এখানে ভরসা রাখেন। কিন্তু নার্স ও আয়াদের ব্যবহার ভালো নয়। টাকা ছাড়া কাজ হয় না। রাতে কোনো অসুবিধায় ডাকলে খারাপ ব্যবহার করা হয়। সরকারি খরচে কিছু ঔষধ দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যত নাপা ছাড়া আর কিছু মেলে না।
অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দালাল-দুর্নীতির কারণে রাজধানীর সাধারণ মানুষের জন্য এই হাসপাতাল এখন ভরসার বদলে হয়ে উঠছে ভোগান্তির আরেক নাম।
Leave a Reply