ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। ২৮টি পদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়ে তিনি জানিয়েছেন, এটি জুলাই প্রজন্মের জয়, শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার জয়।
কায়েম বলেন, এখানে কারও একক বিজয় নেই, এটি প্রতিটি শিক্ষার্থীর জয়। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারাও সহযোদ্ধা, তাই একসঙ্গে কাজ করাই হবে তার মূল লক্ষ্য। ভিপি হিসেবে তিনি আলাদা পরিচয় চান না, বরং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
তার প্রথম কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশকে শক্তিশালী করা, শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা সমাধান এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা। বিশেষ করে মেয়েদের হলের নিরাপত্তা, বাস সার্ভিসে লাইভ লোকেশন চালু, লাইব্রেরির আধুনিকীকরণ ও হলগুলোর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ডাকসুকে ক্যালেন্ডার ইভেন্টে যুক্ত করার কাজও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে কায়েম বলেন, এখানে হার-জিত নেই। তাই অন্যান্য প্রার্থীদের ইশতেহার ও প্রত্যাশাগুলোও কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তারা উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকবেন, সমালোচনা ও পরামর্শ দেবেন, আর সবাই মিলে একটি সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবেন।
ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের একচেটিয়া জয়ের নেপথ্য কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একদিনের প্রস্তুতি নয়। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী পুরো এক বছর শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ফলেই শিক্ষার্থীরা আস্থা রেখেছে। সততা, দক্ষতা এবং ইন্টিগ্রিটির কারণেই এই জয় সম্ভব হয়েছে।
নারী শিক্ষার্থীদের ভোট কীভাবে পেলেন—এ বিষয়ে কায়েম জানান, দীর্ঘদিনের প্রপাগান্ডা ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ভেঙে গেছে। নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকারকে কেন্দ্র করে তাদের ইশতেহারে একাধিক প্রতিশ্রুতি ছিল এবং গত এক বছরে কার্যক্রমের মাধ্যমেই সেই আস্থা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, হিজাব পরা বা নন-হিজাব, আধুনিক পোশাক বা যে কোনো পরিচয়ের শিক্ষার্থী—সবার সমান অধিকার থাকবে। স্বাধীনতা সীমিত করার কোনো সুযোগ নেই।
জগন্নাথ হলে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রসঙ্গে কায়েম বলেন, ভোটসংখ্যা বড় বিষয় নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী এক পরিবারের অংশ। মসজিদ, মন্দির বা গির্জা—সব জায়গায় সমানভাবে কাজ হবে। বিভাজন নয়, সমস্যায় পড়া যে কোনো শিক্ষার্থীর পাশে থাকবে ডাকসু।
অবশেষে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই প্রকৃত বিজয়। সেই লক্ষ্যে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।
Leave a Reply