ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচারণা শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ভোটারদের মন জয় করতে এলাকার বিভিন্ন সংকট চিহ্নিত করে সমাধানে সবাই নানারকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতির কথা বলেছেন, ভোটাররা অনেকে বলছেন এসব প্রতিশ্রুতি পুরনো। তাদের দাবি, আগের জনপ্রতিনিধিরাও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আর নাগরিক সুবিধা পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাচ্ছে মানুষ। আগামীর জনপ্রতিনিধির কাছে ভোটারদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তারা অভয়নগর কে বলেনÑ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ এই তিন খাতে কাক্সিক্ষত সেবাবঞ্চিত এ জেলার মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চরমভাবে অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বিএনপি- জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরচিতি পাওয়ায় এই অঞ্চলকে বাঁকা চোখেই দেখতো আওয়ামী লীগ সরকার। জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর অধিকাংশ সময় এই আসনগুলো বিএনপি- জামায়াতের দখলে থাকায় এটি পরিচিতি পায় বিএনপি জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ জেলার উন্নয়ন নিয়ে চলেছে বৈষম্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর বড় দাবির কোনোটিই পূরণ হয়নি। দীর্ঘ সময়ে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্পের প্রসার ঘটেনি। ভোটাররা বলছেন, সোনাসমজিদ মহাসড়ক ফোর লেন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত সকল আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি আজও পূরণ হয়নি। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বহুতল ভবন থাকলেও নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে মেলেনা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার দাবিও দীর্ঘদিনের। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বড় সমস্যা পদ্মা নদী ভাঙন। ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিটিও উপেক্ষিত। প্রাচীন এ জনপদে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন তারা। ভোটাররা বলছেন, যেই নির্বাচিত হন না কেন, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এই এলাকা থেকে মাদক নির্মূলই হবেÑ বড় চ্যালেঞ্চ। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে মাদকের বিস্তার, রয়েছে বেকারত্বের অভিশাপ। যার থেকে নিস্তার পেতে চাইছেন স্থানীয়রা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে আমরা ভোট দেবো। যিনি উন্নয়নের পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন আমরা তার পক্ষে।
রফিকুল ইসলাম নামের এক ভোটার বলেন, সাধারণ ভোটারদের কাজ, তাদের মধ্য থেকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেয়া। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, নিজের ভোট নিজে দিতে চাই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো গুরুত্ব পাইনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মসংস্থানের জন্য ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কৃষিনির্ভর এ জেলার মানুষ যতটুকু এগিয়েছেন তাদের নিজেদের চেষ্টায়।
বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম জাকারিয়া বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অবহেলিত জেলা। পদ্মা নদী ভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। এমপি নির্বাচিত হলে নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বিএনপি’র আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম চাইনিজ বলেন, প্রবাসী আয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু প্রবাসীদের জন্য চাঁপাইনবাবঞ্জের সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তিনি নির্বাচিত হলে, সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমার প্রতিশ্রুতি হচ্ছেÑ স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যাতে কাক্সিক্ষত সেবা পায় জনগণ। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ভিলেজ পলিটিক্স, মারামারি হয়, মানুষ খুন হয়। এখান থেকে জনগণকে বের করে আনার জন্য একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নে বিএনপি সরকারের অবদান অনেক। আমি এমপি থাকার সময় জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সেসব সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সুফল এখনো পাচ্ছেন স্থানীয় জনগণ। আগামীতে নির্বাচিত হলে জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply