আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি টার্গেট করে দেশে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর এই নির্বাচনি প্রস্তুতি ঘিরে পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছে অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাই শুরু করেছে এবং একই সঙ্গে সময়োপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজও এগিয়ে নিচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে সাক্ষাৎকার ও মূল্যায়নের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবেন দলের মনোনয়ন বোর্ড।
প্রার্থীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ ও ভূমিকার ওপর। একই সঙ্গে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা, সাংগঠনিক অবস্থান এবং দলের প্রতি দীর্ঘদিনের আনুগত্যও গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইতোমধ্যে ঢাকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। শুধু ঢাকা নয়, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, পাবনা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা। একই আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় সবাইকে ডেকে বক্তব্য শোনানো হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, “অনেক এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সেখানে সবাইকে বুঝিয়ে বলা হচ্ছে—যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁকে মেনে নিতে হবে। আমরা শরিকদের জন্যও কিছু আসন ছাড়ব। নির্বাচনের আগে এসব রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন করা হচ্ছে।”
বিএনপি এবার শুধু নিজস্ব প্রার্থী নয়, বরং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সহযোদ্ধা মিত্রদলগুলোর ত্যাগী নেতাদেরও বিবেচনা করছে। শরিকদের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি সমান তালে চলছে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজ। দলীয় নেতাদের মতে, এবার ইশতেহার হবে গণমুখী ও আধুনিক। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়—
প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড,
নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড,
কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড,
শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা,
এবং এক বছরে ৬০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনাও থাকবে এই ইশতেহারে।
ইশতেহার প্রণয়নে কাজ করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা, কূটনীতিক ও অর্থনীতিবিদরা। দলীয় হাইকমান্ড নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন করে ইশতেহার চূড়ান্ত করবে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রচার করা হবে। তারপর তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে মানুষের হাতে হাতে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুগোপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবে বিএনপি। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ঘোষিত ৩১ দফা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়েই ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি সর্বমহলে প্রশংসিত হবে।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি একদিকে প্রার্থী বাছাই, অন্যদিকে যুগোপযোগী ইশতেহার তৈরির মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্দোলনের মাঠ থেকে নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে আসন বণ্টন ও জনমুখী প্রতিশ্রুতি—দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
Leave a Reply