কিশোরগঞ্জের কাটিয়াদীতে সরকারি নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে একযুগ ধরে চলছে রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটাল। অর্ধ দক্ষ সনদহীন জনবল, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও ব্যবহার অযোগ্য মেশিনপএ দিয়ে রোগ নির্ণয় ও অপরিসর কক্ষে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয় রোগীরা।এ নিয়ে সিভিল সার্জন কিশোরগঞ্জের নিকটও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
জনদূর্ভোগ নিয়ে অনুসন্ধানে জানাগেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে নামমাত্র টেকনিশিয়ানদের দিয়ে। ল্যাব পিয়ন, আয়া, এমনকি বাবুর্চির মতো অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মীর অধিকাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সনদপএ নেই।
আরও জানা গেছে, ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নামমাএ মূল্যে আনা পরিত্যক্ত এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে রোগীরা অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে এক্স-রে কক্ষের পাশেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর কারণে বিকিরণে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্হ্য ক্ষতির আশংন্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মালিকপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নবায়ন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রচলিত নিয়মে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর নবায়ন ও পরিদর্শন বাধ্যতামূলক।
জানা গেছে, ইউএইচএফপিও কটিয়াদী ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো পরিদর্শন না করে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের বদৌলতে একএে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দায়সারা পরিদর্শনের মাধ্যম নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রতিবেদন পাঠান।
বর্তমান আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, ভ্যাট নিবন্ধন, পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকোটিকস্ পারমিট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তি বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি অন্তত একজন টেকনোলজিস্ট ও দুজন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকা আবশ্যক। এছাড়া এনেস্থেসিয়া বা অপারেশন থিয়েটারে অনিবন্ধিত ডাক্তার রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল এসব কোনো শর্তই পূরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ যোবায়েদ সুমন বলেন, ‘কাটিয়াদীতে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি পুরনো। কাগজপত্র সব আপডেট করা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তবে ভবনটি মূলত ডায়াগনস্টিকের জন্য উপযুক্ত নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় এখানেই দীর্ঘ ১১ বছর ধরে স্থানীয়দের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা জানান, ‘রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল নিয়ে আরও অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর লাইসেন্সবিহীন এবং নিয়ম অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে উক্ত ক্লিনিক কে অনিয়মের কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন।
Leave a Reply