1. 01404006688bd@gmail.com : জুলিয়া জাহান : জুলিয়া জাহান
  2. mdaloar1986@gmail.com : মোঃ দেলোয়ার হোসেন : মোঃ দেলোয়ার হোসেন
  3. admin@nondito.tv : admin :
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন

ক্যামেরা যার তৃতীয় চোখ: সাব্বির আহমেদের শৈল্পিক যাত্রা

ডিআইইউ প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৭৫৪ বার পঠিত
সাব্বির আহমেদের শৈল্পিক যাত্রা

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা, ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপে যেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হাঁপিয়ে ওঠে, সেখানে এক তরুণ এক হাতে বই, আর অন্য হাতে ক্যামেরায় স্বপ্নের রঙ ছড়াচ্ছেন তিনি সাব্বির আহমেদ। পড়াশোনা করছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়েও ফটোগ্রাফির জগতে নিজের এক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়েছেন। ক্যামেরার লেন্সে বন্দী করেছেন জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো। ক্যাম্পাসের উৎসব, সেমিনার কিংবা ভ্রমণ সব জায়গায় সাব্বিরের অবাধ বিচরণ এবং ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে রঙিন গল্পের একেকটি ফ্রেম।

মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন রাজার হাট গ্রামে জন্ম সাব্বিরের। তবে বাবা মা ঢাকায় থাকতেন বলে শৈশব থেকেই তিনি ঢাকাতে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তার চলাফেরায় ছিল ভিন্নতা, যা নিয়ে পরিবার কখনো বাধা দেয়নি। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার মনে জন্ম নেয় ফটোগ্রাফির নেশা। সময় পেলেই মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতেন এবং সেগুলো এডিট করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঠাতেন।

অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েও সাব্বির কখনো নিজের জন্য ক্যামেরা কিনতে পারেনি এবং পরিবার থেকে কিনে দেয়নি কিন্তু তা তাকে দমাতে পারেনি। ফোন দিয়েই ছবি তোলা চালিয়ে গেছেন এবং কম্পিউটারে এডিট করে ছবিগুলোকে করে তুলেছেন প্রাণবন্ত।

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে চলেন নিজেদের লক্ষ্যের পেছনে। সেই ভিড়ের মাঝেই ক্যামেরা কাঁধে হেঁটে চলেন সাব্বির আহমেদ। তবে তার পরিচয় শুধু শিক্ষার্থীতেই সীমাবদ্ধ নয় ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফির জগতে তিনি এক অনন্য।

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান আর প্রকৃতির রহস্য তাকে মুগ্ধ করত। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফটোগ্রাফির প্রতি তার গভীর আগ্রহ জন্মায়। কীভাবে আলো আর শ্যাডো ছবিকে প্রাণবন্ত করে, কোন অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা ধরলে মুহূর্তটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ধরা পড়ে এসব জানার অদম্য কৌতূহল কাজ করত তার মনে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়ে ইউটিউব, ওয়েবসাইট আর টিউটোরিয়াল দেখে শিখেছেন ফটোগ্রাফি। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুর ক্যামেরা ধার করে, নিজের সঞ্চয় জমিয়ে এভাবেই এগিয়েছেন তিনি।

এসএসসি পাশ করার পরই প্রথম রিমোট এডিটিংয়ের কাজ পান সাব্বির। সেখান থেকেই শুরু হয় তার পেশাদার ফটোগ্রাফির যাত্রা। আজ তার সংগ্রহে রয়েছে নিজস্ব ক্যামেরা, লেন্স এবং অসংখ্য অভিজ্ঞতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বড় অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি প্রায় তার হাতেই সম্পন্ন হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি থেকে আয় করে নিজের খরচ চালান, এমনকি সেমিস্টার ফি জোগাড় করেন।

সাব্বির বলেন “গত সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট শেষ করে ফিরেছি। ক্লান্তি নেই, আনন্দটাই বড়”

শুরুতে পরিবার পুরোপুরি সমর্থন না দিলেও এখন তার কাজের মূল্য সবাই বুঝতে পেরেছেন। বন্ধু, শিক্ষক সবাই তার পাশে। স্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় তিনি পেয়েছেন সহযোগিতা। আজ তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত ফটোগ্রাফার। তার ক্যামেরায় বন্দি হয় মানুষের হাসি, কান্না ও জীবনের নানান অমূল্য মুহূর্ত।

সাব্বির বলেন “আমার লক্ষ্য এখন পড়াশোনা শেষ করে একটি ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি এজেন্সি তৈরি করা। পাশাপাশি একাডেমিক বিষয়ে রিমোট জব করে সংসার ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই”

তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন “আমি চাই, আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিটি ছাত্র কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুক হোক সেটা ফটোগ্রাফি, লেখালেখি বা অন্য কোনো স্কিল। জীবনে বাধা আসবেই, কিন্তু সেই বাধা পেরিয়েই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে

ভালো ফটোগ্রাফি শুধু ক্যামেরার উপর নির্ভর করে না। ডিভাইস সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু আসল জাদুটা আসে চোখের দেখায় আর মনের ভাবনায়। ছবি তোলে যন্ত্র, কিন্তু গল্পটা বলে মন।
সফল ফটোগ্রাফির পেছনে দরকার মনোযোগ, ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য। আলো ঠিকমতো আসবে না, মুহূর্ত ধরা দেবে না যদি মন স্থির না থাকে। একটা ভালো ছবি তোলার জন্য সময় আর সাহস দুটোই লাগে।

অনেকে সীমিত যন্ত্রপাতি দিয়ে তুলেন অসাধারণ ছবি কারণ তাদের চোখে ছিল গল্প দেখার শক্তি, আর মনে ছিল থেমে না যাওয়ার সাহস। ফটোগ্রাফি শেষ পর্যন্ত মনেরই একটা প্রতিফলন।

এভাবেই ক্যামেরার চোখে স্বপ্ন বুনে এগিয়ে চলেছেন সাব্বির আহমেদ। প্রতিটি ক্লিকে ধ্বনিত হয় তার স্বপ্নের সুর।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

<script async src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-9605546039425134″
crossorigin=”anonymous”></script>

All rights reserved © 2019
Design By Raytahost